সিন্ধু নদের পানি স্থায়ীভাবে আটকে রাখার পরিকল্পনা করলে ভারতকে “উচিত শিক্ষা” দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। আন্তর্জাতিক আদালতের রায় পাকিস্তানের পক্ষে যাওয়ার পরও দুই দেশের মধ্যে পানি নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে উঠেছে।
আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) ইসলামাবাদে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে শেহবাজ শরিফ সরাসরি ভারতকে উদ্দেশ্য করে বলেন—
“আমরা আমাদের পানির এক ফোঁটাও ছিনিয়ে নিতে দেব না। যদি আপনারা পানি আটকে রাখার পরিকল্পনা করেন বা কোনো পদক্ষেপ নেন, তাহলে এমন শিক্ষা দেব, যা জীবনে ভুলবেন না।”
এই উত্তেজনার সূত্রপাত গত ২২ এপ্রিল ভারতের জম্মু–কাশ্মিরের পেহেলগামে ভয়াবহ বন্দুক হামলার পর। ওই হামলায় ২৫ জন ভারতীয় এবং একজন নেপালি পর্যটক নিহত হন। ভারত অভিযোগ তোলে যে, এর পেছনে পাকিস্তানের সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক জড়িত—যা পাকিস্তান সরাসরি অস্বীকার করে। হামলার পর প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ হিসেবে ভারত সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে।
চুক্তি স্থগিতের প্রভাব:
এই সিদ্ধান্তে পাকিস্তানের তিনটি প্রধান নদী—সিন্ধু, চেনাব ও ঝিলাম—এর পানি প্রবাহ হ্রাস পায়। কৃষিনির্ভর পাকিস্তানের জন্য এটি এক বড় ধাক্কা, কারণ এসব নদীর পানি সরাসরি কৃষি উৎপাদন, সেচ ও পানীয় জলের সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
পাকিস্তান দ্রুত বিষয়টি আন্তর্জাতিক আদালতে নিয়ে যায়। ৮ আগস্ট আদালত রায় দেয়—সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি বহাল থাকবে এবং ভারতকে এর শর্তে ফিরে আসতে হবে। পাশাপাশি, আদালত স্পষ্ট নির্দেশ দেয় যে, ভারত যদি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বা বাঁধ নির্মাণ করে, তবে অবশ্যই চুক্তির শর্ত মেনে তা করতে হবে।
ভারতের পরিকল্পনা ও নতুন হুমকি:
চুক্তি স্থগিতের পর ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন—জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সিন্ধু নদের ভারতীয় অংশে বাঁধ নির্মাণ করা হবে। এই মন্তব্য পাকিস্তানের সেনাপ্রধানকে উত্তেজিত করে তোলে। গত ৯ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন—
“আমরা অপেক্ষা করব না। যখন আপনারা বাঁধ নির্মাণ শেষ করবেন, তখন ১০টি ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সেটি ধ্বংস করব। সিন্ধু নদ ভারতের ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়, আর আমাদের ক্ষেপণাস্ত্রের অভাব নেই।”
পাকিস্তান এই মুহূর্তে আদালতের রায়কে কূটনৈতিক বিজয় হিসেবে দেখছে এবং ভারতকে আলোচনার টেবিলে ফেরাতে চাপ দিচ্ছে। তবে ভারত এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট ও সম্ভাব্য উত্তেজন :
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পানি ইস্যুটি ভারত–পাকিস্তান সম্পর্কের নতুন সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হতে পারে। কাশ্মির ইস্যুতে দীর্ঘদিনের উত্তেজনার সঙ্গে এখন যোগ হয়েছে পানির কূটনীতি, যা দুই দেশের সীমান্ত অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা বাড়াতে পারে।
Pingback: গুগলের ক্রোম ব্রাউজার কিনতে চাওয়া সেই রহস্যময় তরুণ কে? - 7newsbd